Home » » ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতি

ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতি

ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতি

Connection System of Internet

বর্তমানে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের পদ্ধতি আছে। বহুল প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হলো-

১. ডায়াল আপ সিস্টেম (Dial-Up System)

২. আইএসডিএন (ISDN)

৩. ব্রডব্যান্ড (Broadband)

৪. ওয়াই-ফাই (Wi-Fi)

৫. ওয়াইম্যাক্স (WiMax)


ডায়াল আপ সিস্টেম

Dial-Up System

এ ধরনের পদ্ধতিতে কম্পিউটারের সাথে টেলিফোন লাইন ও মডেম সংযুক্ত থাকে। কম্পিউটার মডেমের মাধ্যমে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আইএসপি (ISP) বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। তবে ডায়াল আপ পদ্ধতিটি তুলনামূলক সহজ কিন্তু ইন্টারনেটের স্পিড তুলনামূলকভাবে অনেক কম।


আইএসডিএন

ISDN

ISDN-এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Integrated Service Digital Network. এটি নিয়মিত টেলিফোনের বিকল্প এক ধরনের টেলিফোন সার্ভিস। ISDN-এর সুবিধা হচ্ছে এটি নিয়মিত টেলিফোন লাইনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন বা আদান-প্রদান করতে পারে। তবে এটি সাধারণ টেলিফোন লাইনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ডেটা আদান-প্রদান করেতে হয়, সেখানে এ ধরনের সার্ভিস ব্যবহৃত হয়ে থাকে।


ব্রডব্যান্ড

Broadband

এ ধরনের সার্ভিস সিস্টেম ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রদান করে থাকে। ব্রডব্যান্ড সিস্টেমে ডেটা ট্রান্সমিশন বা আদানপ্রদানের হার অনেক বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।


ওয়াই-ফাই

Wi-Fi

Wi-Fi-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Wireless Fidelity। Wi-Fi-এর অপর নাম হচ্ছে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট এক্সেস। অর্থাৎ Wi-Fi হলো তারবিহীন এক ধরনের প্রযুক্তি, যা রেডিও ওয়েব ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) প্রযুক্তিই-বিশ্ব পর্যায়ে মানুষকে জোগাচ্ছে ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস সার্ভিস। তবে Wi-Fi এ ২.৪ গিগাহার্টজ (GHz) ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়।


Wi-Fi-এর স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে IEEE 802.11b (Institute of Electrical and Electronics Engineers)। তবে IEEE 802.11 হচ্ছে একটি ওয়্যারলেস বা তারবিহীন LAN স্ট্যান্ডার্ড। একটি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে দশটি বা তার অধিক কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইস সংযুক্ত করতে পারে। সাধারণত সকল নোটবুক, ল্যাপটপ, পেরিফেরাল ডিভাইস, প্রিন্টার, স্মার্ট ফোন, এমপি থ্রি প্লেয়ার, ভিডিও গেইম কনসোল এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার Wi-Fi-এর মাধ্যমে সংযুক্ত করা যায়। ডাচ কম্পিউটার বিজ্ঞানী ভিক্টর ভিক হেরেসকে ওয়াই-ফাই-এর জনক বলা হয়। তিনি ডেল্ফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সিনিয়র ফেলো হিসেবে কর্মরত অবস্থায় IEEE 802.11b ওয়াই-ফাই আবিষ্কার করেন। তবে অন্য স্ট্যান্ডার্ডসমূহ হলো 802.11a, 802.11g I 802.11n এবং যাদের গতি যথাক্রমে 54 Mbps, 54 Mbps I 300 Mbps. বর্তমানে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে IEEE 802.11n স্ট্যান্ডার্ডটি। আর IEEE 802.11a স্ট্যান্ডার্ডটি অধিক ব্যয়বহুল হওয়ায় বর্তমানে এর Public access নেই।


১৯৯১ সালে নেদারল্যান্ডসের NCR Corporation আবিষ্কৃত এক ধরনের তারবিহীন নেটওয়ার্ককে আজকের Wi-Fi টেকনোলজির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওয়াই-ফাই (Wi-Fi)-এর কভারেজ এরিয়া একটি কক্ষ, একটি ভবন কিংবা কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হয়ে থাকে। সাধারণত ইনডোরের ক্ষেত্রে এই দূরতব ৩২ মিটার এবং আউটডোরের ক্ষেত্রে ৯৫ মিটারের মত হয়ে থাকে। তবে আউটডোরের ক্ষেত্রে একাধিক অ্যাকসেস পয়েন্ট ব্যবহার করে এই কভারেজ আরো বৃদ্ধি করা যায়। অবশ্য Wi-Fi-এর ডেটা

ট্রান্সফার রেট সাধারণত 11 Mbps থেকে 300 Mbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।


ওয়াই-ফাইয়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ

• এটি IEEE 802.11 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক।

• সাধারণত নেটওয়ার্কের জন্য কোনো প্রকার ক্যাবল বা তারের প্রয়োজন হয় না।

• কভারেজ এরিয়া সাধারণত ৫০ মিটার থেকে ২০০ মিটারের মতো হয়ে থাকে।

• নেটওয়ার্কে সহজে নতুন নোড যুক্ত করে নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়ানো যায়।

• হাফ ডুপ্লেক্সিং মোড ব্যবহৃত হয়।

• এটি সাধারণত 2.4 GHz–5GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। তবে বর্তমানে তা 5.85 GHz পর্যন্ত হয়ে থাকে।

• সিগন্যাল নয়েজ (SNR-signal to noise ratio) সর্বোচ্চ 10 dB (decibel)।

• বাধামুক্ত সিগন্যাল ট্রান্সফারের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন সুবিধা আছে।

• মিডিয়া অ্যাকসেস কনেট্রালের জন্য CSMA/CA (Carrier Sense Multiple Access with Cllision Avoidance) প্রোটোকল ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি।


ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধাসমূহ

১. ওয়াই-ফাইয়ের কনফিগারে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।

২. আইপি টিভি সেবা প্রদান করে।

৩. যেকোনো মানের Wi-Fi বিশ্বের যেকোন জায়গায় কাজ করে।

৪. দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও অধিক নিরাপদব্যবস্থা।

৫. শতাধিক ব্যবহারকারী একক বেজ স্টেশন ব্যবহার করতে পারে।

৬. সহজে নতুন ব্যবহারকারী নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারে।

৭. একাধিক অ্যাকসেস পয়েনেটর জন্য নেটওয়ার্ক রোমিং সুবিধা।

৮. ওয়াই-ফাইয়ের পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম।

৯. একই সাথে মাল্টিফাংশনালি সুবিধা পাওয়া যায়।

১০. বর্তমানের Wi-Fi স্ট্যান্ডার্ডগুলো ফ্রিকোয়েন্সি হোপিং সুবিধা প্রদান করে ইত্যাদি।


ওয়াই-ফাইয়ের অসুবিধাসমূহ

১. ওয়াই-ফাইয়ের সীমানা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

২. দূরতব বেশি হলে একাধিক বেজ স্টেশনের প্রয়োজন হয়।

৩. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

৪. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

৫. ডেটার আদান-প্রদানে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে।

৬. নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে।

৭. তুলনামূলক কম নির্ভরযোগ্য।

৮. নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ব্যান্ডউইথ কমে যায়।

৯. ঝড়-বৃষ্টিতে সিগন্যালের সমস্যা দেখা দেয়।


ওয়াইম্যাক্স

WiMAX

WiMAX-এর পূর্ণরূপ হলো World Wide Interoperability for Microwave Access. বহনযোগ্য কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সুবিধাকে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি বলে। এটি একটি তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তি। এটি IEEE 802.16 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক। ২০০১ সালের এপ্রিলে ওয়াইম্যাক্সের জনম হয়।


বিভিন্ন প্রকার ইন্টারনেট সেবার মধ্যে স্বল্প ব্যয়ে সীমিত আয়তনের এলাকায় ওয়াইম্যাক্স একটি সহজ ও সুবিধাজনক প্রযুক্তি। এটি ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (ম্যান)-এর মতো এবং এর গতি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মতোই গতিসম্পন্ন অথচ ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। তবে ব্রডব্যান্ড ওয়াইম্যাক্স পদ্ধতির দুটি প্রধান অংশ থাকে। যথা-


১। বেজ স্টেশন : ইনডোর ও আউটডোর টাওয়ার নিয়ে গঠিত। বেজ স্টেশনগুলো একটি ওয়াইম্যাক্স হাব বা সুইচের সাথে যুক্ত থেকে নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়।


২। ওয়াইম্যাক্স রিসিভার : এর সঙ্গে একটি অ্যানেটনা থাকে এবং এটিই কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এর কভারেজ এরিয়া ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ওয়াইম্যাক্স সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-

১. ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স ও

২. মোবাইল ওয়াইম্যাক্স


ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স : ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স IEEE 802.16d স্ট্যান্ডার্ডের এবং এর ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 10 GHz থেকে 66 GHz। এ ধরনের সংযোগের জন্য গ্রাহক প্রান্তে একটি রিসিভার টাওয়ার বা অ্যানেটনা বসানো থাকে এবং ওয়াইম্যাক্সের ব্যান্ডইউডথ মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের তুলনায় বেশি থাকার পরও মোবালিটি না থাকার কারণে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি।


মোবাইল ওয়াইম্যাক্স : মোবাইল ওয়াইম্যাক্স IEEE 802.16e স্ট্যান্ডার্ডের এবং এর ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 2 GHz থেকে 11 GHz। এ ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রান্তে মূলত এজ মডেম ব্যবহৃত এবং ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ট্রান্সমিশনের কারণে সিগন্যাল যেকোনো জায়গায়, অর্থাৎ বাসার ভেতরে বা বাইরে অনায়াসে চলাচল করতে পারে। তবে এ ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে ওয়াইমাক্সের বেজ স্টেশনের কাছাকাছি অবস্থান করতে হয়। অন্যথায় রেডিও সিগন্যাল লস বা ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মোবাইল ওয়াইম্যাক্স সার্ভিসের ক্ষেত্রে সার্ভিস প্রোভাইডারদেরকে অধিকসংখ্যক বেজ স্টেশন স্থাপন করতে হয়।


ওয়াইম্যাক্সের বৈশিষ্ট্যসমূহ

o এটি IEEE 802.16 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক।

o কভারেজ এরিয়া সাধারণত ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

o সাধারণত নেটওয়ার্কের জন্য কোনো প্রকার ক্যাবল বা তারের প্রয়োজন হয় না।

o নেটওয়ার্কে সহজে নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত করে নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়ানো যায়।

o ডেটা ট্রান্সফারের রেট সাধারণত 80 Mbps থেকে 1 Gbps পর্যন্ত হয়ে থাকে।

o ফুল ডুপ্লেক্সিং মোড ব্যবহৃত হয়।

o এটি সাধারণত 2 GHz–66 GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। তবে Non Line of Sight-এর জন্য ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 2 GHz থেকে 11 GHz এবং Line of Sight-এর জন্য ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ 2 GHz থেকে 66 GHz ।

o সিগন্যাল নয়েজ (SNR-signal to noise ratio) সর্বোচ্চ 7 dB (decibel)।

o বাধামুক্ত সিগন্যাল ট্রান্সফারের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন সুবিধা আছে।

o ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড লাইসেন্স বা লাইসেন্সবিহীন হতে পারে।

o ওয়াইম্যাক্স কানেকশন ওরিয়েন্টেড MAC প্রোটোকল ব্যবহার করে ইত্যাদি।


ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা

১. অধিক নিরাপদ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা।

২. তারের নেটওয়ার্কে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা মেরামতের প্রয়োজন হয় কিন্তু ওয়াইম্যাক্সে সে ঝামেলা নেই।

৩. যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রেও এখানে বিনিয়োগ এককালীন। সেদিক দিয়ে খরচ অনেক কম।

৪. এর যোগাযোগের আওতা অনেক বেশি হওয়ায় (১০ থেকে ৬০ কিলোমিটার) পথে-ঘাটে যেকোনো জায়গা থেকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব।

৫. ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ভিওআটি ব্যবহার করে যোগাযোগ হয় আরো সহজে।

৬. শতাধিক ব্যবহারকারী একক বেজ স্টেশন ব্যবহার করতে পারে।

৭. কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নিশ্চয়তা প্রদান করে।

৮. একই সাথে মাল্টিফাংশনালি সুবিধা পাওয়া যায়।


ওয়াইম্যাক্সের অসুবিধা

১. অধিক ব্যয়বহুল।

২. দূরতব বেশি হলে একাধিক বেজ স্টেশনের প্রয়োজন হয়।

৩. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

৪. ঝড়-বৃষ্টিতে সিগন্যালের সমস্যা দেখা দেয়।

৫. বিদ্যুৎ খরচ অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় বেশি।

৬. নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ব্যান্ডউইথ কমে যায়।

৭. অন্যান্য ডিভাইস কর্তৃক সিগন্যাল জ্যামের সৃষ্টি হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *