Home » » সংখ্যা পদ্ধতি কি

সংখ্যা পদ্ধতি কি

সংখ্যা পদ্ধতি কি

সংখ্যা পদ্ধতি (Number System)

পৃথিবীর আদিকালে মানুষ গণনা বা হিসাবের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করত। কালের বিবর্তনে মানুষ গণনা বা হিসাবের জন্য সংখ্যা বা অংক ব্যবহার করা শেখে। অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ গণনার কাজের জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ণ, সংখ্যা বা অংক ইত্যাদি ব্যবহার করেছে। এ ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ণ, সংখ্যা বা অংক পাশাপাশি রেখে তা প্রকাশ করার পদ্ধতিই হলো সংখ্যা পদ্ধতি। অর্থাৎ একটি মানসম্মত ব্যবস্থায় বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন বা অংক, বর্ণ, লেখা বা প্রকাশ করার পদ্ধতিই হলো সংখ্যা পদ্ধতি। 


সংখ্যা পদ্ধতিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি (Non-Positional Number System) ও

২. পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি (Positional Number System)


নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি (Non-positional Number System)

প্রাচীনকালে মানুষ হিসাব নিকাশের জন্য নুড়ি পাথর, হাতের আঙ্গুল, ঝিনুক ও দড়ির গিঁট ব্যবহার করত। এ ধরনের গণনা পদ্ধতিই হলো নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি। অর্থাৎ নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি হলো এমন এক ধরনের পদ্ধতি, যেখানে সংখ্যাগুলোর কোনো স্থানীয় মান থাকে না। শুধুমাত্র সংখ্যার নিজস্ব মান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন- নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত প্রতীক ও দ্বারা ১, II দ্বারা ২, III দ্বারা ৩, IIII দ্বারা ৪ ইত্যাদি প্রকাশ করে। নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতিতে হাতিয়ার, পশুপাখি, জীবজন্তুর ছবি, গাছ, ফুল ফল ইত্যাদি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে এ ধরনের সংখ্যা পদ্ধতিতে গাণিতিক কাজ করা খুবই জটিল।


পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি (Positional Number System)

কোনো সংখ্যা পদ্ধতি প্রকাশ করার জন্য যে সকল সাংকেতিক চিহ্ন বা মৌলিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তা অংক বা ডিজিট (Digit) নামে পরিচিত। যেমন- বাইনারি সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য দুটি অংক ০ এবং ১ ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের অংক বা ডিজিটগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ইত্যাদি। ডিজিট ব্যবহার করে সংখ্যা পদ্ধতি প্রকাশ করার পদ্ধতিই হলো পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি। 


এ পদ্ধতিতে কোনো একটি সংখ্যার মান বের করার জন্য প্রয়োজন :

১। সংখ্যাটিতে ব্যবহৃত অংকগুলোর নিজস্ব মান।

২। সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি।

৩। সংখ্যাটিতে ব্যবহৃত অংকগুলোর অবস্থান বা স্থানীয় মান।


সংখ্যা পদ্ধতির বেজ

Base of Number System

প্রত্যেক পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির একটি নির্দিষ্টসংখ্যক অংক বা সংখ্যা থাকে যা সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি নামে পরিচিত। অর্থাৎ কোনো সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মৌলিক চিহ্নসমূহের বা অংকসমূহে মোট সংখ্যা। যেমন- বাইনারি সংখ্যা ০ ও ১ এ দুটি অংকে সমন্বয়ে গঠিত। তাই বাইনারি সংখ্যার বেজ ২। তেমনি দশমিক সংখ্যায় মোট ১০টি অংক ব্যবহার হয় বিধায় এর বেজ ১০।


সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তির ওপর নির্ভর করে পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-

১. বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System)

২. অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System)

৩. দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System)

৪. হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System); ইত্যাদি।


বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System)

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি একটি ২-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ০ এবং ১ এই দুটি অংক ব্যবহৃত হয়। এ দুটি অংককে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে যেকোনো সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে লেখা যায়। বাইনারিতে দুটি অংক ব্যবহৃত হয় বিধায় এ পদ্ধতির বেজ ২। (১১০)২, (১১০১)২, (১০১.০১১)২ ইত্যাদি হলো বাইনারি সংখ্যার উদাহরণ।


কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের উপাত্ত বা ডেটা সংরক্ষণ করে থাকে। আবার কম্পিউটারের সকল অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন হয় বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে। দশমিক সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর হচ্ছে-

১০০০, ১০০, ১০, ১ বা ১০৩, ১০২ , ১০১, ১০০ (দশমিক সংখ্যার বেজ ১০)

অনুরূপভাবে পূর্ণ বাইনারি সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর :

.........., ৬৪, ৩২, ১৬, ৮, ৪, ২, ১, বা ২৬, ২৫, ২৪ , ২৩, ২২, ২১, ২০ ইত্যাদি (বাইনারি সংখ্যার বেজ ২)

ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর হচ্ছে :

.৫০, .২৫, .১২৫,.......... বা ২-১, ২-২, ২-৩, ............ইত্যাদি।


অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System)

অক্টাল একটি ৮-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মোট ৮টি অংক বা ডিজিট ব্যবহৃত হয়। অংক বা ডিজিটগুলো হলো 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6 I 7। (101)8, (731)8, (645.103)8 ইত্যাদি হলো অক্টাল সংখ্যার উদাহরণ। অক্টাল সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত মান হচ্ছে নিমণরূপ-

দশমিক বিন্দু (বেশি গুরুত্বের অঙ্ক) MSD ¬ 84 83 82 81 80 . 8-1 8-2 8-3 ®  LSD (কম গুরুত্বের অঙ্ক)


দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System)

দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি একটি ১০-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মোট ১০টি (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯) অংক বা ডিজিট ব্যবহার করা হয়। এ দশটি অংকের সাহায্যে স্থানীয় মান যেমন- একক, দশক, শতক ইত্যাদি ব্যবহার করে যেকোনো মানের দশমিক সংখ্যা তৈরি করা যায়। (২০৭)১০, ২২৩১০, (৫৭.৩১)১০ ইত্যাদি হলো দশমিক সংখ্যার উদাহরণ।


আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন গণনার কাজে আমরা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে একক, দশক, শতক, সহস্র, অযুত,... ইত্যাদি ব্যবহার করে যে মান নির্ণয় করা হয় তাকে স্থানীয় মান বলে।


দশমিক সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর হচ্ছে :

1000, 100, 10, 1 বা 103, 102 , 101, 100 (দশমিক সংখ্যার বেজ ১০)


ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর হচ্ছে :

10-1, 10-2, 10-3 , ............ইত্যাদি।

বা, 0.1, 0.01, 0.001, ............ইত্যাদি।


হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System)

হেক্সাডেসিমেল একটি ১৬-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মোট ১৬টি অংক বা ডিজিট ব্যবহার করা হয়। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যায় ১৬টি প্রতীকের মধ্যে দশমিক পদ্ধতির দশটি প্রতীক এবং বাকী ৬টি বর্ণ প্রতীক ব্যবহার করা হয়। ০ থেকে ৯ পর্যন্ত অংক প্রতীক এবং ৯-এর পরেরগুলো হচ্ছে A, B, C, D, E I F। এখানে A, B, C, D, E এবং F-এর সমতুল্য দশমিক মান হচ্ছে যথাক্রমে 10, 11, 12, 13, 14 এবং 15(851)16 , (21B)16, (AC. 1B)16 ইত্যাদি হলো হেক্সাডেসিমেল সংখ্যার উদাহরণ। 


এ পদ্ধতিতে সংখ্যার অবস্থানগত মান হচ্ছে-

দশমিক বিন্দু (বেশি গুরুত্বের সংখ্যা) MSD¬ 164, 163, 162, 161, 160 . 16-1, 16-2, 16-3® LSD (কম গুরুত্বের সংখ্যা)

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *